সোনারগাঁয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি
নিজস্ব সংবাদদাতা, সোনারগাঁ, ॥ সোনারগাঁয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে প্রকাশ্য অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এতে ওই এলাকার দুইটি সেতুসহ প্রায় ৩০ টি গ্রামের ঘর বাড়ি, বাজার, স্কুল ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও তেমন প্রতিকার পাচ্ছে না। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গেয়ে জানা গেছে, উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি ও জোয়ারদী গ্রামের রমজান সরকারের নেতৃত্বে জুমন সরকার, শওকত আলী, মৃশপুরা গ্রামের ইসুব আলী খাঁনের ছেলে ওসমান খান, ঢাকার আছিরউদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসান, সাদিপুর ইউনিয়নের কাজরদ্দী গ্রামের সামসুর হকের ছেলে আবুল কালাম, সুজন শাহারীয়া সহ ২০/২৫ জনের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সনমান্দী ইউনিয়নের অলিপুরা সেতুর পাশে নদী খননের নাম করে কয়েকটি ড্রেজার বসিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কৃষি জমি ভরাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে লাখ লাখ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দারের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট নদী খননের নাম করে ব্রহ্মপুত্র নদের ইমানেরকান্দী এলাকায় ড্রেজার বাসিয়ে দিন-রাত প্রকাশ্য অবৈধ ভাবে বালু কেটে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধাঁ দিলে হামলাসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। বালু উত্তোলনের ফলে নিরীহ অনেক কৃষকের জমি ও বাড়ি-ঘর ভেঙে ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে একাধীক বার আবেদন করলে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে কোন ভাবেই বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারেনি।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল বারেক বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে কয়েক বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ করে থাকি। যে ভাবে বালু কাটছে এতে জমিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই ভাবে ভাঙ্গলে আগামী বছর ধান চাষাবাদ দুরের কথা জমিও খুঁজে পাবো না ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অলিপুরা এলাকার কয়েক ব্যক্তি জানান, যে ভাবে বালু কাটছে তাতে আমাদের বাড়ি-ঘর যে কোন সময় নদীতে ভেঙ্গে যেতে পারে। প্রশাসনের কাছে কয়েক শতাধীক গ্রামবাসী স্বাক্ষর করে অভিযোগ দিয়েও তেমন কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।
সনমান্দী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার মফিজউদ্দিন বলেন, এসিল্যান্ড স্যার কয়েক বার অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানাসহ অবৈধ ড্রেজার পাইপ ভেঙ্গে দিয়েছে। তাতেও বন্ধ করতে পারছি না। তারা হামলা ও মামলা করে আমাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবে এমন ভয় দেখায়।
অভিযুক্ত রমজান সরকারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
অভিযুক্ত উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বলেন, বালু উত্তোলনের সাথে আমি জরিত নই। তবে কন্ট্রাষ্টরের কাজ দেখাইয়া দেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নদী খনন করে ঐ মাটি দিয়ে নদীর বাধঁতে দিতে হবে। যদি কেউ সরকারি নিয়মের বাহিরে কাজ বা বালু বিক্রি করে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ